December 23, 2024, 3:53 pm
রাজশাহী প্রতিনিধি ॥
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পদ্মা নদীতে ইলিশ শিকারে এসে আটক হওয়া ভারতীয় জেলে প্রণব মলের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে চারঘাট থানায় মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
দুটি মামলার মধ্যে একটিতে প্রণবের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।। আরেকটিতে অভিযোগ আনা হয়েছে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে বেআইনিভাবে মাছ শিকারের। আসামি প্রণবের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী থানার ছিড়াচর গ্রামে। তার বাবার নাম বসন্ত ম-ল। এই প্রণবকে আটকের জের ধরে বিজিবি এবং ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিজেদের একজন সদস্য নিহত এবং আরেকজন আহত হওয়ার দাবি করেছে বিএসএফ।
তবে বিজিবি বলছে, তারা ফাঁকা গুলি ছুঁড়েছে। নিহত বা আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমিত কুমার জানান, চারঘাট সীমান্ত করিডর ফাঁড়ির বিজিবি সদস্যরা রাতে প্রণবকে থানায় নিয়ে আসেন। এরপর তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। প্রণবকে রাতে থানায় খেতে দেওয়া হয়। তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন। শুক্রবার তাকে আদালতে তোলা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চারঘাট উপজেলা সদরের বিপরীতে পদ্মা ও তার শাখা বড়াল নদের মোহনা শাহরিয়ার খাল নামক এলাকায় বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এলাকাটি ভারতের চর পাইকমারি সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার বাংলাদেশের ভেতরে। এই ঘটনার পর বিকালে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে রাতে বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, বিএসএফের পক্ষ থেকে তার কাছে দাবি করা হয়েছে গোলাগুলিতে তাদের একজন সদস্য নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও একজন। তবে বিজিবি তা নিশ্চিত নয়। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, মা ইলিশ সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মৎস্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে পদ্মা নদীতে অভিযানে যায় বিজিবি। এ সময় মাছ ধরার সময় তিনজন জেলেকে আটকের চেষ্টা করা হলে দুইজন পালিয়ে যান। তবে প্রণবকে জালসহ আটক করে নদীর এপারে নিয়ে আসা হয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ১১৭ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কাগমারী ক্যাম্প থেকে চার সদস্যের একটি টহল দল স্পীড বোট নিয়ে অনুমতি ছাড়া শূন্য লাইন অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশের ৬০০ থেকে ৬৫০ গজ ভেতরে নদীর এপারে বিজিবি টহল দলের কাছে আসে এবং আটক ভারতীয় নাগরিককে ছেড়ে দিতে বলে। বিজিবি টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিককে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে বলে তাদের জানায়। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা ভারতীয় নাগরিককে বিজিবির কাছ থেকে নিয়ে মারধর করেন। তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এতে বিজিবি সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে আনুমানিক ৬ থেকে ৮ রাউন্ড ফায়ার করে। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবির টহল দল ফাঁকা ফায়ার করে। তখন বিএসএফ সদস্যরা ফায়ার করতে করতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিহত বিএসএফ সদস্যের নাম বিজয় ভান সিং। আর আহত জওয়ানের নাম রাজবীর সিং। রাজীবর বিএসএফের ১১৭ নম্বর ব্যাটেলিয়নের হেড কনস্টেবল। বিএসএফের বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
বিজিবির অধিনায়ক ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, পতাকা বৈঠকে উভয়পক্ষ তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া এ বিষয়ে আরো আলোচনার জন্য সীমান্তে দ্রুতই আরেকটি পতাকা বৈঠক করার বিষয়ে বিজিবি-বিএসএফ সম্মত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিজিবি-বিএসএফ গোলাগুলির এই ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেছেন, এতে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।